অত্র মাদরাসায় তিনটি বিভাগ চালু আছেঃ ১) নূরানী বিভাগঃ প্লে থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। এ বিভাগের বৈশিষ্ট্যসমূহ- ক) কুরআন মাজীদ শুদ্ধভঅবে পড়তে সক্ষমতা অর্জন। খ) বাংলাদেশের সুনামধন্য নূরানী বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার পাশাপাশি নির্ভূল ও সুন্দর হাতের লেখার নিশ্চয়তা। গ) পূর্ণ কুরআন মাজীদসহ আরবী যেকোন বিষয় শোনার মাধ্যমে নির্ভূল ও সুন্দর হাতের লেখার নিশ্চয়তা। * ২) হিফয বিভাগঃ এ বিভাগের বৈশিষ্ট্যসমূহ- ক) অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীর তত্ত্বাবধান। খ) আন্তর্জাতিক মানের শুদ্ধ ও সুন্দর তেলাওয়াত। গ) মেধানুযায়ী দ্রুততম সময়ে হিফয সমাপন। * ৩) একাডেমিক বিভাগঃ এ বিভাগের বৈশিষ্ট্য- ক) সালাফী মতাদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত মাদরাসা সমূহের বোর্ড, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এবং মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত কারিকুলামের আলোকে তৈরিকৃত অনন্য ও অপূর্ব কারিকুলামের সাহায্যে পাঠদান। খ) কুরআন মাজীদ, তাফসীর এবং হাদীছের মূলগ্রন্থ পঠন-পাঠনের মাধ্যমে যোগ্য আলেমে দ্বীন তৈরি। গ) দাখিল, আলিম এবং ফাযিল পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের নিশ্চয়তা।
ইসলামের সোনালী যুগে মুসলিম জাতিসত্তার এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই দুনিয়ার জাতিসমূহের দরবারে মুসলিম জাতির অবস্থান ছিল আপন স্বকীয়তায় ভাস্বর। জ্ঞান চর্চা, জীবন-সাধনা, রাষ্ট্রশাসন সর্বত্র এই মুসলমানদের হাতে ছিল একচ্ছত্র অধিকার। আজ সেই মুসলিম জাতি শুধু নিজের প্রভাব প্রতিপত্তিই হারায়নি, অমুসলিম জাতিগুলোর কাছে সে করুণার পাত্রেও পরিণত হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে তার আকার আকৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে বটে, কিন্তু তার আদর্শিক বৈশিষ্ট্য ও নৈতিক গুণাবলী বহুলাংশেই লোপ পেয়েছে। কারণ ইসলামের সুমহান আদর্শের পরিবর্তে মুসলমানরা আজ বর্ণ, ভাষা ও অঞ্চলের ভিত্তিতে খন্ড বিখন্ড হয়ে পড়েছে। যা তাদের জাতিসত্তাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। তারা ইসলামী শিক্ষা দর্শন পরিহার করে পাশ্চাত্যের জড়বাদী শিক্ষাদর্শনকে গ্রহণ করেছে। তাদের সাহিত্যে নৈতিক মূল্যবোধের পরিবর্তে ভোগবাদী চিন্তা দর্শনের প্রতিফলন ঘটছে। তাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে নির্মল সৌন্দর্য বোধের পরিবর্তে উৎকট নগ্নতা ও অশ্লীলতা ছায়াপাত করেছে। এর ফলে আজকের মুসলিম জনগোষ্ঠী নৈতিক ও আদর্শিক মূল্যবোধ হারিয়ে কার্যত এক বিশৃঙ্খল জনারণ্যে পরিণত হয়েছে। এই চরম বিপর্যয় থেকে মুসলিম জাতিকে উদ্ধার করার জন্য আজকে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তার প্রকৃত স্বরূপ অন্বেষার; তার হারানো বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তাকে ফিরে এনে তাকে নতুন ভাবে বিশ্বের দরবারে উপস্থিত করার। তাছাড়া ইসলামের নির্ভেজাল রূপ জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের শিক্ষা এবং মুহাদ্দিছীনে কেরাম (রঃ) এর মাসলাক অনুসরণে সালাফে সালাহীনের বুঝ অনুযায়ী পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সঠিক ব্যাখ্যা উপস্থাপনেরও আশু প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এই প্রয়োজন মেটানোর সুমহান দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০০৪ সালে শুরু হয় অত্র প্রতিষ্ঠানের পদযাত্রা। যেটি আজ অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে লেখাপাড়ার সফল বিপ্লবের মাধ্যমে ঈর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশে শিক্ষার ৩টি ধারা রয়েছে। (১) সাধারণ (২) আলিয়া মাদরাসা ও (৩) ক্বওমী মাদরাসা। এ তিনটি ধারাতেই বর্তমানে এক নিদারুণ বন্ধ্যাত্ব চলছে। কারণ সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক তথা ধর্মীয় শিক্ষাকে উপেক্ষা করায় তা আজ দ্বীনহীন বস্তুবাদী শিক্ষা ব্যবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষায় নৈতিক তথা ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও সঠিক পরিচর্যার অভাবে সিলেবাস সর্বস্ব হয়ে বস্তুবাদী শিক্ষার পরিণতি বরণ করছে। অপরদিকে ক্বওমী শিক্ষায় যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন না করায় এ ধারার শিক্ষার্থীরা যেমন উচ্চতর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি সরকারী বিভাগ গুলোতেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে হচ্ছে চির তাড়িত। এই বন্ধ্যাত্ব ও ত্রিবিধ সমস্যার অবসান ঘটানোর জন্য আজ প্রয়োজন সাহসী লোকদের এক বলিষ্ঠ উদ্যমের, প্রয়োজন ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত একটি গণ বিস্ফোরণের। কাঙ্খিত সেই গণ বিস্ফোরণকে সম্ভব করে তোলার জন্যই মাদরাসাতুল হাদীছ আস-সালাফিয়া এর বিদগ্ধ শিক্ষকগণ ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষার এমন অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন যা সত্যিই বিষ্ময়কর। এর প্রয়োগে শিক্ষার্থী যেমন ইসলামী শিক্ষায় হবে পারদর্শী, তেমনি সাধারণ শিক্ষাতেও হবে সমান অভিজ্ঞ।
১. তাখাসসুস ফিললুগাহঃ আরবি ভাষার সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘তাখাসসুস ফিললুগাহ’ অসাধারণ সংযোজন। মুতাওয়াসসেতা ছালেছা, সানাবিয়া ও কুল্লিয়া পর্যায়ের এবং যেকোন বয়সের শিক্ষার্থীর আরবি ভাষা, ব্যাকরণ ও সাহিত্যে পারদর্শিতা অর্জনের অকল্পনীয় সমাধান ‘তাখাসসুস ফিললুগাহ’।"
২. মাদানী নেসাবঃ আদর্শ ছাত্র গড়ার নিখুঁত কারিগরির নাম ‘মাদানী নেসাব’। যা মাদরাসাতুল হাদীছ আস-সালাফিয়া-র সফলতম উদ্যোগগুলোর অন্যতম। আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষা এবং ব্যাকরণের প্রথম ধাপ (পঞ্চম শ্রেণি) থেকে শুরু করে টানা ৩ (তিন) বছর মেয়াদী মাদানী নেসাবে পড়ার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলবার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।"
৩. কো-কারিকুলাম কার্যক্রমঃ লেখা-পড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধা বিকাশের জন্য বিভিন্ন কো-কারিকুলাম কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের ইসলামী চেতনাবোধকে সদা জাগ্রত ও শানিত করার জন্য শিরক, বিদ‘আত মুক্ত ইসলামী সংগীত, বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করা হয়। আর সেই লক্ষ্যে মেধাবী, পরিশ্রমী ও আগ্রহী ছাত্রদেরকে নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘ইসলামীক কালচারাল গ্রুপ’।"